কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশি গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় ৬ হাজার ৮৯০টি গবাদি পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে মোট গবাদি পশু রয়েছে ৪৫ হাজার ১৮১টি। এর মধ্যে গরু ২৮ হাজার ৩৯২টি এবং ছাগল ও ভেড়া ১৬ হাজার ৭৯৯টি। গত বছর খুলনায় খামারের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১টি।
তবে গত বছরের তুলনায় এবার খামার ও গবাদিপশু উভয়ের সংখ্যাই কমেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে পশুর দাম কমে যাওয়ায় খামারিদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও।
খামারিরা জানান, মূলত কোরবানি উপলক্ষেই গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন পশু মোটাতাজা করা হয়। ঈদুল আজহার ৪-৫ মাস আগে থেকেই কয়েক দফা পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। সে অনুযায়ী পশুর দামও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে পশু খাদ্য ও আনুসঙ্গিক সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেলেও পশুর হাটে দাম কম। আবার হাট বসলেও ক্রেতা কম।
গরু ব্যবসায়ী সন্দিপন বিশ্বাস বলেন, কোরবানিতে বিক্রির জন্য দুটি বড় গরু ছিল। দুই মাস আগে ব্যবসায়ীরা ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দাম বলেন। আট হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করেন। কিন্তু পরে আর তারা আসেনি। বাধ্য হয়ে হাটে নিয়ে লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে।
মো. জাহাঙ্গীর মোল্লা নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, সারা বছরই আমরা গরু কেনা বেচা করে থাকি। তবে এ বছর গরুর দাম অনেক কম।
ডুমুরিয়ার ডেইরি ফার্মের মালিক সাদি বলেন, পশু খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য এবং অন্যান্য খরচ মিলে গরু লালন-পালনে ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দাম পাওয়া নিয়ে আশংকা রয়েছ।
সাচিবুনিয়ার খামারি মো. বশির হোসেন জোনান, তার খামারে ১২টি দেশি গরু আছে। যার মধ্যে কোরবানিযোগ্যি আছে পাঁচটি। কিন্তু এ বছর তেমন গরুর ব্যাপারীদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
তেরখাদা এলাকার খামারি হাসেম আলী বলেন, প্রতি বছর কোরবানিতে ভালো দামে বিক্রির উদ্দেশ্যেই গরু লালন-পালন করি। কিন্তু এবার গরু বিক্রি কিনা সেটি নিয়েই দু:শ্চিন্তা রয়েছে।
তবে খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলেন, করোনার কারণে এবার অনলাইনে বেশি কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে। আর নগরীর হাটে পশু আসার সময় এখনও রয়েছে।
এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, বাইরে থেকে এবার কোরবানির পশুর দাম কম বলে যে গুজব শুনেছি, হাটে এসে তার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। গরুর দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা দাম কম বলছেন। বাজার দরও অনেকে দিতে চাইছেন না। এজন্য গরু বিক্রি হচ্ছে কম।
হাট পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও কেসিসি’র ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন জানান, হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি ভালো। হাট পুরোপুরি জমে উঠেছে। নগরীর জোড়াগেট হাটে সাধারণত শেষ দুই দিনে বেচাকেনা বেশি হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বলে আশা করছি।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাসের অজুহাতে ছয় বছরের ব্যবধানে এবার অর্ধেকে নেমেছে চামড়ার দাম। বিপরীতে জুতা, ব্যাগ, বেল্টসহ চামড়াজাত সকল পণ্যের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। কাঁচা ও প্রক্রিয়াজাত চামড়ার এ মূল্য বৈষম্যের নির্মম শিকার দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রান্তিক ব্যবসায়ী ও দেশি চামড়া শিল্প। চামড়ার মূল্য হ্রাসের সুফলভোগী লাভবান রপ্তানিকারক, চামড়া কেন্দ্রীক বহুজাতিক কোম্পানি ও বিদেশি চামড়াজাত পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো।
সূত্রমতে, ২০১৪ সালে দেশে কোরবানির ঈদে গরুর চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম ছিল ৭০-৭৫ টাকা। চলতি বছর তা নেমে এসেছে ৩৫-৪০ টাকায়। যা গত বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ কম।
খুলনা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম ঢালী বলেন, খুলনায় চামড়ার ব্যবসা আছে, ব্যবসায়ী নেই। প্রত্যেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে নিস্ব। ঋণ করে কয়েকজন ব্যবসায়ী চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে মৌসুমী ফড়িয়াদের দৌরাত্মের আশংকা রয়েছে। এসব ফড়িয়ারা বিদেশিদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে মাদরাসাগুলোতে দাদন (অগ্রিম অর্থ প্রদান) দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, কোরবানির সময় চামড়া পাচার প্রতিরোধে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের ৬৬০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জাতীয় সম্পদ রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ। খুলনা বিভাগের সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহের থানাগুলোকে কঠোর সতর্কাবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
র্যাব-৬ অধিনায়ক লে. কর্নেল রওশোনুল ফিরোজ বলেন, র্যাবের নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে কঠোর নজরদারি থাকবে।